বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব- ২৩

ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় তিনটে। রোমেলকে থানায় ড্রপ করে জিলানী তার বাসার দিকে ছুটলেন। তিনি সাধারণত ক্লান্ত হন না, কিন্তু এ সময় তাঁর চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। মাথার ভেতর যে চিন্তাটা আগে থেকে রয়েছে তা হলো, রেজাউদ্দিন সাহেব কোথায় ? এখন যে প্রশ্নটা ছেয়ে আছে তা হচ্ছে— জেরিনের কী হলো !
জিলানী ওসি সাহেবকে ধলেশ্বরী ব্রীজের ঘটনাটা জানান।
ওসি সাহেব থানার সেকেন্ড অফিসারকে ডাকেন। প্রথমে জিডি রেজিস্টার দেখা হয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে এবং কাউকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা হলে বা পাওয়া গেলে সাথে সাথে থানায় জিডি এন্ট্রি করে রাখা হয়। কিন্তু জিডি রেজিস্টারে এরকম কোন তথ্য পাওয়া গেলো না। থানার স্টাফ কেউ এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নয়।
ওসি সাহেব জিলানী ও তাঁর সহযাত্রীদের জন্য গরম তেহারির ব্যবস্থা করেন। মানিকগঞ্জের দই এনে খাওয়ান। তাঁর হার্দিক আন্তরিকতায় সবাই মুগ্ধ। এভাবে সময় গড়িয়ে রাত এগারটা ছুঁই ছুঁই। ওসি সাহেব বলেন যে ধলেশ্বরী নদীর অপর পাড় থেকে মানিকগঞ্জ জেলার অধিক্ষেত্র শুরু। কাজেই মানিকগঞ্জ সদর থানাতেও এর খোঁজ নেয়া যেতে পারে।
রাত বেশি হয়ে গেছে দেখে ওসি সাহেব বলেন যে সকালে তিনি নিজেই খোঁজ নেবেন। জিলানীকে মহিলা ভিকটিমের নাম ঠিকানা, ফোন নাম্বার, শারীরিক বর্ণনা, ঘটনার তারিখও সময়সহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ রেখে যেতে অনুরোধ করেন। জিলানী সুস্পষ্ট হস্তাক্ষরে প্রয়োজনীয় সব তথ্য কাগজে লিখে দেন। জেরিনের দুটো ছবি সাথে নিয়ে এসেছিলেন, সেটাও দিলেন। জেরিনের নিখোঁজ পিতা রেজাউদ্দিন সাহেবের একটা ছবিও সাথে দেন। ওসি সাহেব আশ্বাস দেন, তিনি যত দ্রুত সম্ভব খোঁজ খবর নিয়ে জিলানীকে জানাবেন।
বাসার সামনে এসে জীপটা থামলো। জিলানী দেখলেন দুই অপিরিচিত ব্যক্তি সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে। জিলানী জীপ থেকে নামলেন। নামলো সোহরাবও।
‘তোমরা রাত তিনটায় এখানে কী করছো ?’ জিলানী দুজনকে জিজ্ঞেস করলেন।
‘আমরা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী।’ একজন জবাব দিলো।
‘তোমাদের সাথে তো ঝাড়ু নেই।’ জিলানী বললেন।
‘বিল্ডিংয়ে পিছনে আছে।’ একথা বলে দুজন বিল্ডিংয়ের পেছনে গেলো। এরপর তাদের আর দেখা গেলো না। জিলানী সোহরাবকে বললেন,‘কী বুঝলে ?’
‘স্যার ওরা চোর হতে পারে।’ সোহরাব মন্তব্য করল।
‘চোর হলে কি এখানে দাঁড়িয়ে চেহারা দেখাত ?’
‘তাহলে মনে হয় মাদকসেবী।’
‘আমার মনে হচ্ছে অন্য কিছু। তুমি সাবধানে যেও।’ একথা বলে জিলানী সিঁড়িতে পা ফেললেন।
পরদিন অফিসে পৌঁছুতে আধঘন্টা বিলম্ব হলো। অফিসরুমে গিয়ে কেবলই চেয়ারে বসেছেন, ডিআইজি সাহেবের অর্ডারলি ভেতরে এলো।
‘স্যার, ডিআইজি স্যার আপনাকে সালাম দিয়েছেন।’ সে জানাল।
‘আচ্ছা। আসছি।’ জিলানী বললেন।
অর্ডারলি চলে গেলো। জিলানী ভাবলেন— ডিআইজি স্যার ডেকেছেন, তাও সকাল সকাল ! নিশ্চয়ই সিরিয়াস কিছু !
ইন্সপেক্টর জিলানী ডিআইজি সাহেবের রুমে ঢুকলেন। দেখেন এসএস (ক্রাইম) সাহেবও সেখানে বসে আছেন। বুঝলেন, প্রথমে তাঁকে ডাকা হয়েছে। ডিআইজি সাহেব জিলানীকে বসতে বললেন। কয়েক মুহূর্ত জিলানীর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন,‘জিলানী কেমন আছো ?’
‘ভালো আছি স্যার।’ জিলানী সরাসরি জবাব দিলেন।
‘তোমার ইনভেস্টিগেশন শুনলাম ভালোই এগোচ্ছে।’
‘চেষ্টা করছি স্যার যাতে ডিপার্টমেন্টের সুনাম অক্ষুন্ন থাকে।’
‘আই নো, ইউ আর এ কনফিডেন্ট অ্যান্ড কম্পিটেন্ট ইনভেস্টিগেটিং অফিসার।’
‘থ্যাংক ইউ স্যার।’
‘ওয়েল, জিলানী বলো তো, তওফিক তালুকদারের বিরুদ্ধে কি স্পেসিফিক কোন চার্জ আছে ?’
ইন্সপেক্টর জিলানী এবার তাঁকে ডাকার কারণটা আঁচ করে ফেললেন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে তারপর বললেন,
‘স্যার, সেদিন টিটি সাহেব আমাকে একটা ইমেপর্ট্যান্ট ডকুমেন্ট দেখাবার কথা বলে ডেকে ব্রিফকেস ভর্তি পঞ্চাশ লাখ টাকা ঘুষ অফার করে আমার সামনে রেখেছেন। বিনিময়ে আসামী রিফাতকে ছেড়ে দিতে বলেছেন। এই অপরাধের অভিযোগে তাকে অ্যারেস্ট করার কথা বললে আমার দিকে তার পিস্তল তাক করে পালাতে চেষ্টা করেছেন। যদিও সাথে সাথে থানার পুলিশ এসে তাকে ধরে ফেলে।’
‘আই সি।’ ডিআইজি সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন।
‘কোন প্রবলেম হয়েছে স্যার ?’ জিলানী সাহস করে জিজ্ঞেস করলেন।
‘প্রবলেম কিছু তো থাকেই। তোমাকে বলেই ফেলি, মিনিস্টার সাহেবের এপিএস ফোন করেছিলেন আমাদের অ্যাডিশনাল আইজি সাহেবেকে।’
‘নিশ্চয়ই ফোনটা তওফিক সাহেবের পক্ষে স্যার ?’
‘ইউ গট ইট। স্যার আমাকে বলেছেন ইস্যুটার খোঁজ নিয়ে তাঁকে ইমিডিয়েটলি ইনফরম করতে। তওফিক তালুকদার পার্টির সেন্ট্রাল কিমিটির একজন বড় ডোনার, পাওয়ার বলয়ে তার চলাফেরা তা কি জানো ?’
‘হতে পারে স্যার, টাকায় টাকা আনে, পাওয়ারফুলও করে। কিন্তু এ মুহূর্তে আইনের চোখে উনি একজন ক্রিমিনাল মাত্র। মি: টিটি একটা গোপন অপরাধচক্রের হোতা। মার্ডার, কিডন্যাপিংসহ জঘন্য অপরাধে তিনি এবং তার লোকজন জড়িত।’
ডিআইজি সাহেব চোখ বড় বড় করে তাকালেন। তারপর বললেন,‘তুমি কি মনে করো তার নাম চার্জশিটভুক্ত হবে ?’
‘অবশ্যই হবে স্যার। আমি নিশ্চিত। তাকে ছেড়ে দেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। স্যার আপনি যদি চান আপনাকে পুরো কেস-ডায়েরি দেখাতে পারি।’
এসএস (ক্রাইম) এতক্ষণ শুনছিলেন। এবার ইন্সপেক্টর জিলানীকে সমর্থন করে বললেন, ‘জিলানী ঠিকই বলেছে স্যার। আমি এই কেসটা সুপারভাইজ করছি। বিরাট রহস্য জড়িয়ে আছে পুরো কেসটায়। প্রোপার্টি নিয়ে দু’ দুটো মার্ডারের এলিমেন্টস্ দেখা যাচ্ছে। মূল আসামিদের ডিটেকশনও প্রায় চূড়ান্ত। এখন চালে একটু অসতর্ক হলে ঘাটে এসে তরী ডুবতে পারে স্যার।’
সব শুনে ডিআইজি সাহেব একটু চিন্তা করলেন। টেবিলে রক্ষিত মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে ঢেলে আধা গ্লাস পানি পান করলেন। তারপর বললেন,‘ঠিক আছে, আই উইল ট্রাই টু কনভিন্স হিম। থ্যাংক ইউ। আপনারা আসুন।’
একটু আগে রিমান্ডে থাকা আসামি স্যান্ডোকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিলানী এবং সোহরাব লক্ষ্য করেছে যে স্যান্ডো বেশ হিংস্র এবং সাইকো টাইপের যুবক। তার নির্ভরতা মস্তিষ্কের চেয়ে পেশিশক্তির উপর অধিক। অস্বাভাবিক অর্থলিপ্সা তার মানবিক গুণাবলীকে হরণ করেছে। তার তাকানো দৃষ্টিকটু, কন্ঠ প্রক্ষেপণ শ্রুতিবিধুর।
স্যান্ডো প্রশ্নের জবাব দিতে চায় নি। যে কটা জবাব দিয়েছে তার সারমর্ম হলো সে এ সম্পর্কে কিছু জানে না। সে মি: টিটির বডিগার্ড, তার কাজ শারীরিকভাবে বসকে পাহারা দেওয়া। অন্য কোথাও সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ তার নেই। বস তাকে এক লক্ষ টাকা বেতন দেয়, এর চেয়ে বেশি টাকার দরকার নেই তার। স্যান্ডো আরও বলে যে ১২ জানুয়ারি সে বসের কাজে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে রেড মুন হোটেলে অবস্হান করেছে।
অত:পর জিলানী তাকে রোমেলের রেকর্ডকৃত বক্তব্যের কিছু অংশ শোনায়। ওটা শোনার পর স্যান্ডো হতভম্ব হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে থাকে— আমি কাউকে কিছু করি আর না করি, শালা রোমেলকে ছাড়বো না। কুত্তার বাচ্চাকে আমি ঠিকই খুন করব।
জিলানী স্যান্ডোর এই কথাটাও রেকর্ড করে ফেলেন। এটা দেখে স্যান্ডো তেড়ে আসে। সোহরাব এবং দুই স্যান্ট্রি স্যান্ডোকে ধরে ফেলে। এরপর তার হাত দুটো বেঁধে ফেলা হয়। তার পা দুটি উপরে একটা লোহার বারের সাথে বেঁধে তাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। জিলানী চলে এলেও সোহরাব সেখানে রয়ে গেছে।
জিলানী অফিসশেষে সরাসরি বাসায় ফিরেছেন। সন্ধ্যার আগে জিলানীকে বাসায় দেখে সাজিয়া প্রসন্ন বোধ করলো। সে জানে এ সময় জিলানী চা পছন্দ করবেন। জিলানী ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রয়িংরুমে বসলেন। ভাবছেন এখন একটু রেস্ট নিয়ে রাতে স্যান্ডোকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এর আগে তার স্বীকারোক্তি আদায়ের লাগসই কৌশল বের করতে হবে।
ঐ মালতীলতা দোলে, পিয়াল তরুর কোলে ঐ……সাজিয়া গুণ গুণ করতে করতে ড্রয়িং রুমে এলো। তার হাতে ট্রে। ট্রেতে বিস্কুট এবং চা। জিলানী চায়ের কাপ হাতে নিলেন। একটা বিস্কুট চায়ে ভিজিয়ে খেলেন। এরপর চায়ে চুমুক দিতে দিতে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালেন। মনে হলো যেন বহুদিন পর তাঁর স্ত্রীর মুখটা পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখছেন।
‘থেমে গেলে কেন ? গানটা খালি গলায় গাও। আমি শুনি।’ জিলানী অনুরোধের সুরে বললেন। সাজিয়া আবার গানটা ধরলো। খালি গলায় সাজিয়ার কন্ঠ অন্যরকম শ্রুতিমধুর। জিলানী আবিষ্ট হয়ে শুনে বললেন, ‘বাহ্ ! বাহ্ !’
সন্ধ্যার পর সাজিয়া জিলানীকে বলল, ‘তোমাকে খুব টায়ার্ড দেখাচ্ছে। কিছুক্ষণ রেস্ট নাও। আমি না হয় পরে ডেকে দেবো।’
জিলানী বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। স্ত্রীকে বললেন, ‘তুমি আমার কাছে এসে বসো।’
সাজিয়া বিছানায় তাঁর মাথার পাশে বসলো। জিলানী আধবোঁজা চোখে সাজিয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিতহাসি দেয়ার চেষ্টা করলেন। সাজিয়া ডানহাতের কাঁকনটা একটু উপরে তুলে জিলানীর মাথায় হাত বুলাতে শুরু করলো। একটু পরেই জিলানী সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়লেন।
পরদিন শুক্রবার জিলানী তাঁর বাসায় বসে এ মামলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত যাবতীয় কাগজাদি এবং রেকর্ডপত্র পর্যবেক্ষণ করলেন। অনেকগুলো পয়েন্ট পৃথকভাবে নোট করে রাখলেন।
শুক্রবার রাত বারোটা। নিধি পুরো ঘরটা চেক করে ঘুমাতে গেছে। আজ সকালে সালেকা বুয়া আসে নি। নিধিকেই সব কাজ করতে হয়েছে। অবশ্য পরিশ্রম করলে তার ঘুমটাও ভালো হয়। তার একার জন্য কিচেনের কাজ কম হলেও বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দৈনন্দিন কাজকর্ম আগের মতোই আছে। পুরো বাড়িটাই তাকে একাকী দেখে রাখতে হচ্ছে !
নিধি ভাবে— সিকিউরিটি ম্যানদের সাথে সে আর রাগারাগি কিংবা বচসা করবে না। ওদের কোন দোষ নেই, যা অর্ডার পায় তাই করে। এমন নিষ্ঠাবান খুব একটা দেখা যায় না। তারা দুজনই স্বল্পবেতনভুক কর্মচারী, দিন-রাত ডিউটি করে, কী খায় না খায় ! মাঝে মাঝে ওদের ভালো-মন্দ রান্না করে খাওয়ানো উচিত। সেই সাথে রিফাতের কাজের ছেলে সরলপ্রাণ মোচনকেও। এতে উপকারের পাশাপাশি তার পুণ্য অর্জনও হয়ে যাবে। এক যাত্রায় দুই ফল !
আজ রাতে গেটে নিরাপত্তা প্রহরায় রয়েছে রুস্তম। আদিল ডিউটি করেছে দিনের বেলায়। দূরের রাস্তায় এখন হাল্কা যানচলাচলের শব্দ। বাসা-বাড়ির প্রায় সব বাতি নিভে গেছে। ধীরে ধীরে ছেয়ে যাচ্ছে নিশুতী রাতের নীরবতা। রুস্তম বেচারার চোখও ঢুলু ঢুলু। ডিউটিতে এক তিল পরিমাণ ফাঁকি দেয় না সে। পাশ দিয়ে একটা বড় ইঁদুর দৌড়ে যাওয়ার সময় খচ খচ শব্দ হলে রুস্তমের চোখ দুটো একদম টান টান হয়ে গেলো।
রাত একটা। রুস্তম দেখে এক লোক এদিকে হেঁটে আসছে। রুস্তম একটু অবাক হয়— এ গভীর রাতে কে আসছে এ বাড়িতে ! লোকটা গেটের কাছে চলে এলো। তরুণ বয়সী। সে একটু অবাক চোখে তাকালো, যেন গেটে কেউ প্রহরারত আছে এটা সে প্রত্যাশা করে নি।
‘কাকে চান ?’ রুস্তম লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো।
‘আপনাকে চেনলাম না ভাই। আগে কখনও দেখি নাই।’ তরুণটা বললো।
‘আমি সিকিউরিটি।’
‘ও, নতুন বসাইছে ! এইটা ভালো হইছে। ভাই আমাকে ইকটু ভিতরে যাইতে দেন।’
‘কার কাছে যাবেন ?’
‘নিধি ম্যাডামের সাথে দেখা করবো।’
‘এতো রাতে ! আপনার পরিচয় ?’
‘ম্যাডাম আমাকে চিনে।’
‘উনি কি আপনাকে আসতে বলেছেন ?’
‘না। আমিই আসছি। জরুরি কথা বলার আছে।’
‘ঠিক আছে, ম্যাডামকে মোবাইল করুন।’
‘আমার কাছে মোবাইল নাই।’
মোবাইল নেই শুনে রুস্তম বিরক্তি সহকারে তার দিকে তাকালো। পরক্ষণে নিজের মোবাইলটা বের করলো। আবার ভাবলো রাত একটায় নিধি ম্যাডামকে মোবাইলে কল দেওয়া ঠিক হবে কিনা। এদিকে লোকটা বলছে জরুরি কথা আছে। জরুরি কী সেটাও দেখা প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত রুস্তম নিধিকে কল দিলো। প্রথমবার রিং হয়ে মিস হয়ে গেলো। দ্বিতীয়বার রিং বাজলো। ওপাশ থেকে নিদ্রাজড়িত কন্ঠে নিধির আওয়াজ এলো।
‘হ্যালো। রুস্তম এতো রাতে !’
‘একজন আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।’
‘কে ?’
‘নাম বলে নি। ইয়াং বয়সের। মুখে দাড়ি আছে। খুব নাকি জরুরি।’
কিছুক্ষণ কোন কথা নেই। এরপর নিধি বললো,
‘আমাকে বলে আসে নি। এত রাতে কী কথা ! আচ্ছা মোবাইলটা তাকে দাও।’
রুস্তম আগন্তুকের হাতে তার মোবাইলটা দিলো। সে কানের সাথে লাগিয়ে বললো,
‘ম্যাডাম আমি।’
‘এই, তুমি আমাকে না বলে কেন এসেছো ? গাধা কোথাকার ! এখনই এখান থেকে চলে যাও। নইলে মহাবিপদ ! আমি পরে তোমার সাথে কথা বলবো।’
নিধি ফোন রেখে দিলো। আগন্তুক রুস্তমকে মোবাইল ফিরিয়ে দিলো। খুব চিন্তিত সে।
রাতের নিস্তব্ধতায় মোবাইলে নিধির সব কথা শোনা গেছে। ‘এখান থেকে চলে যাও নইলে মহাবিপদ’ এই কথাটা রুস্তমের মস্তিষ্কে ধাক্কা খেলো। নিশ্চয়ই সন্দেহজনক কিছু ! বসকে জানাতে হবে।
তরুণ লোকটা যখন চলে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন রুস্তম তাকে থামতে বললো। তারপরও সে রুস্তমের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে পা বাড়ালে রুস্তম তাকে জাপটে ধরলো। তরুণটি সমস্ত শক্তি দিয়ে রুস্তমকে ফেলে দিলো। এবার রুস্তম কোমর থেকে পিস্তল বের করে তার দিকে তাক করে বললো,
‘খবরদার ! এক পা নড়লে গুলি করে তোমার খুলি উড়িয়ে দেবো। আমি সিআইডি’র লোক।’
সাথে সাথে রুস্তম এসআই রাইসকে ফোন লাগালো।
ইন্সপেক্টর জিলানীর মোবাইলে রিং হচ্ছে। জিলানী হাতের কাজ শেষ করে কেবলই বিছানায় গেছেন। মোবাইলটা তুললেন। রাত ১টা ৩৫ মিনিট, তাঁর সহযোগী এসআই রাইসের কল।
‘স্যরি স্যার এতো রাতে কল করতে হলো।’ রাইস বললো।’
‘আমি ঘুমাই নি। বলে ফেলো।’ জিলানী বললেন।
‘স্যার ওই দাড়িওয়ালা যুবকটা ধরা পড়েছে।’
‘ভেরি গুড ! কোথায় ?’
‘জেরিনদের বাড়ির গেটে।’
‘তুমি কোথায় ?’
‘রুস্তমের কল পেয়ে আমি এখানে এসেছি স্যার।’
‘ওয়েল ডান ! তাকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যাও।
আমি এখনই জীপ পাঠাচ্ছি।’
‘সে কে জানেন স্যার ?’ রাইস উত্তেজিত।
‘কে ?’ এবার জিলানীও প্রচন্ড উৎসুক।
‘ওয়ান্টেড খসরু।’
চলবে…..