বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব- ১৯

জেরিনকে হয় অপহরণ করা হয়েছে, নয়তো হত্যা করা হয়েছে।
ইন্সপেক্টর জিলানী একান্তে ভাবছেন। তাঁর সন্দেহ প্রথমটার চাইতে পরেরটাতে বেশি।
রেজাউদ্দিন সাহেবের অন্তর্ধানকাল আজ প্রায় দেড় মাস, কিন্তু জেরিনের আরও এক সপ্তাহ অধিক। অপহরণের মূল উদ্দেশ্য থাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে কোন দাবি দাওয়া আদায় কিংবা অন্য কোন স্বার্থ হাসিল। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের কারও সাথে অথবা উপযুক্ত কোন ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার। এ ক্ষেত্রে তা করা হয় নি এবং এখনো হচ্ছে না। যোগাযোগ ব্যতিরেকে এভাবে দীর্ঘদিন কাউকে আটকে রাখা অর্থহীন বিধায় ‘অপহরণ’ বিশ্বাসযাগ্য হচ্ছে না।
নিখোঁজ কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার বিষয়টিও ভাবনায় উদ্রেক হতে পারে কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে এ দুটো প্রণিধানযোগ্য নয়। কেননা, বাসা থেকে এয়ারপোর্টের রাস্তা জেরিনের চেনা। জেরিন তার পরিচিতজনদের সাথেই গাড়িযোগে এয়ারপোর্টে রওয়ানা হয়েছিলেন। তিনি চলতি গাড়ি থেকে নেমে অন্যভাবে চলে যাবেন সে সম্ভাবনাও নেই। সুতরাং তার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। অন্যদিকে যে গাড়ি তিনি ব্যবহার করেছিলেন সে গাড়ি ছিল রিফাতের এবং গাড়িটা সেদিন বহাল তবিয়তে বাড়িতে ফেরত এসেছে। কাজেই সড়ক দুর্ঘটনার কোন আশঙ্কাও এখানে টিকছে না। অতএব….
এখন সকাল সাড়ে ৯টা। আজ বেলা ১১টার সময় জিলানীর ‘রেইনবো’তে যাবার কথা। সেখানে রিফাতের বিরুদ্ধে তাঁকে ডকুমেন্ট দেখানোর জন্য অপেক্ষা করবে রিফাতেরই অবন্ধু কলিগ। ব্যাপারটা জিলানীর কাছে কেন যেন রিডিকুলাস মনে হচ্ছে। যদিও কোন কোন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিহিংসাপরায়ণ সহকর্মী সাধারণত এমন নাজুক সময়েই আঘাত করে থাকে।
জিলানীর মস্তিষ্ক টনটনিয়ে উঠল। রিফাতের অপরাধের নতুন কোন প্রমাণ পেলে ভালো ; ওটা তার বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে। আর যদি অন্য কিছু হয় ! জিলানীকে সেখানে একা আসতে বলা হয়েছে। এমনও তো হতে পারে লোকটি রিফাতের কোনো চক্রের সদস্য ! হতে পারে তদন্তকারী অফিসারকে তারা ডেকে এনে জিম্মি করতে চায় কিংবা ব্লাকমোইল করতে চায় ! যা হয়, দেখা যাবে। চ্যালেঞ্জ নেয়ার মধ্যে একটা থ্রিল তো আছে! তবে হ্যাঁ, সাবধানের মার নেই।
জিলানীর মস্তিষ্ক টনটনিয়ে উঠল। রিফাতের অপরাধের নতুন কোন প্রমাণ পেলে ভালো ; ওটা তার বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে। আর যদি অন্য কিছু হয় ! জিলানীকে সেখানে একা আসতে বলা হয়েছে। এমনও তো হতে পারে লোকটি রিফাতের কোনো চক্রের সদস্য ! হতে পারে তদন্তকারী অফিসারকে তারা ডেকে এনে জিম্মি করতে চায় কিংবা ব্লাকমোইল করতে চায় ! যা হয়, দেখা যাবে। চ্যালেঞ্জ নেয়ার মধ্যে একটা থ্রিল তো আছে! তবে হ্যাঁ, সাবধানের মার নেই।
জিলানী তাঁর সহযোগী সোহরাবকে ফোন লাগালেন।
‘ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের ‘ক্যাফে রেইনবো’ চেনো ?’
‘জি স্যার, চিনি।’
‘তুমি এবং রাইস ঠিক এগারোটায় রেইনবো’র নিচে থাকবে। উইপনসহ। আমি ভেতরে ঢুকবো একই সময়ে। সময়মত কল দেবো, তখন দু’জনই ভেতরে চলে আসবে।’
‘ওকে স্যার। স্যার, রাইস তো এখনও মোহাম্মদপুরের বছিলায় কভারে রয়েছে।’
‘জানি। রাইসকে বলে দিচ্ছি। মোহাম্মদপুর থেকে সাত মসজিদ রোড কাছেই।’
জিলানী রাইসকে কল দিয়ে একই নির্দেশনা প্রদান করলেন। এছাড়া ধানমন্ডি থানার ওসি সাহেবকে বিষয়টা জানিয়ে রাখলেন যেন কল পেলে তিনি সাথে সাথে পুলিশ ফোর্স পাঠাতে পারেন।
বেলা ১১টা। ঝরঝরে আাবহাওয়া। ইন্সপেক্টর জিলানী তাঁর জীপ থেকে নামলেন। ‘ক্যাফে রেইনবো’র নিচে সোহরাব ও রাইসের সাথে তাঁর চোখাচোখি হলো। জিলানীর পরিধানে বিস্কুট কালারের হাফ সাফারি সুট। পায়ে কালো শু। চোখে সানগ্লাস। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে তিনি ধীর পদক্ষেপে ক্যাফেতে ঢুকলেন।
ভেতরটা সুসজ্জিত। কফির একটা মাদকময় ঘ্রাণ থাকে। সেটাই নাকে এসে লাগছে। কাস্টোমার এসময় খুব বেশি নেই। ক্যাশ কাউন্টারের পাশে একটা কাঁচের কন্টেইনারভর্তি তাজা কফির বিন। তার পাশে কাঁচঘেরা সেলফে রাখা আছে—ব্রাউনি, কেক, ক্রইস্যান্ট, ডোনাট, পেস্ট্রি, চিকেনপাফ, ক্লাব স্যান্ডউইচ ইত্যাদি। অর্ডার পেলে বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, ডোসা, সাবওয়ে স্যান্ডউইচ এসব বানিয়ে দেওয়া হয়। কফির মধ্যে ক্যাপাচিনো এবং লাটে এ দুটোই চলে বেশি।
এক সাইডে একটা টেবিল খালি, এর মুখামুখি দুটো চেয়ার। ওর একটা চেয়ারে জিলানী বসলেন। ডানে ও বাঁয়ে দেখলেন, তাঁর চেনা জানা কেউ নেই। পকেট থেকে সিগারেটসহ প্যাকেট বের করে একটা ধরালেন। মাথার উপরে হাল্কা-ফুল্কা মিউজিক বাজছে। মিউজিক তাঁর পছন্দ। সুর ও ছন্দের তালে তালে জিলানীর ডান হাতের আঙ্গুলগুলো তবলার মতো টেবিলের উপর নাচানাচি করতে লাগলো।
একজন তরুণ ওয়েটার কাছে এলো। একটা ফরমাল হাসি দিয়ে জিলানীর সামনে ‘মেনু’বইটা রাখল। জিলানীও স্মিতহাসি উপহার দিলেন। ক্যাফের সব ওয়েটারের গায়ে লাল টি-শার্ট, শার্টের গায়ে ইংরেজীতে লেখা ‘রেইনবো’। রংধনুর একটা আভাসচিত্র রয়েছে লেখার এদিক-ওদিক।
এমন সময় লম্বা, ফর্সা, গোলগাল, স্বাস্হ্যবান, টাকামাথা, মাঝবয়সী এক লোক ইন্সপেক্টর জিলানীর ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো। জিলানীর দিকে তাকিয়ে বলল,‘হ্যালো জিলানী সাহেব, থ্যাংকস্ ফর কামিং।’
‘ইউ আর ওয়েলকাম। বসুন।’ জিলানী চোখের সানগ্লাসটা খুলে বুক পকেটে রাখলেন। লোকটিকে সামনের খালি চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন। লোকটি বসল।
‘ফোন কি আপনি করেছিলেন?’ জিলানী সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে জিজ্ঞেস করলেন।
‘জী, আমি। প্রয়োজন ছাড়া কি আর আপনার মতো ব্যস্ত এবং নামী অফিসারকে ফোন করি !’
‘বলেছিলেন আপনি রিফাত সাহেবের কলিগ। কী নাম আপনার ?’
‘আমার নাম টিটি।’
‘টিটি ! টিটি কী ? ‘
‘সেটা বলছি। আগে বলুন কী খাবেন ?’
‘থ্যাংকস্। আপনার নিজের জন্য অর্ডার করতে পারেন। আমি যা খাওয়ার খাচ্ছি।’
‘অনলি সিগারেট ! বাস্ ?’
‘হ্যাঁ, বাস্।’
লোকটা এদিক ওদিক তাকালো। তারপর জিলানীকে বলল,‘আপনার তো খুব সুনাম ! সমাজের জন্য অনেক কিছু করছেন। অথচ নিজের এবং পরিবারের ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে কী উদাসীন ! রিয়েলি, এমন ক’জন হয় !’
জিলানী লোকটার ‘ডেমিনার’ লক্ষ্য করলেন। আহা কী দরদ ! ভাবলেন, সে যদি রিফাতের কলিগ হয়ে থাকে তাহলে তো তাঁর সাথে এ ধরনের আলাপ করার কথা নয় !
‘আমাকে রিফাতের কোন ক্রাইমের ডকুমেন্ট দেখাবেন, গতকাল বলেছিলেন। দেখি কী সেটা।’ জিলানী লোকটাকে মনে করিয়ে দিলেন।
‘সিওর।’ লোকটা একটু দূরে বসে থাকা এক যুবককে হাত দিয়ে ইশারা করলো। পেটা শরীরের ওই যুবকটা উঠে এসে লোকটার পাশে দাঁড়ালো। তার হাতে বড় সাইজের একটা ব্রিফকেস।
‘সে কে ?’ জিলানী যুবকটির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন।
‘সে আমার পার্সোনাল স্টাফ। বডিগার্ড বলতে পারেন। নাম হলো স্যান্ডো।’
লোকটা বডিগার্ড নিয়ে চলে ! এবার জিলানী নিশ্চিত, সে রিফাতের অফিসের কেউ নয়। তাহলে কে ?
‘আমার নাম টিটি, মানে তৌফিক তালুকদার। আমি সত্যি সত্যি আপনাকে হেল্প করার জন্যই এখানে ডেকেছি। এক মিনিট..’
লোকটা উঠে কাউন্টারের পাশ থেকে ছোট দু’বোতল মিনারেল ওয়াটার এনে টেবিলের ওপরে রাখলো। তারপর জিলানীর দিকে মুখ করে বলল,‘পানি খেতে তো আপত্তি থাকার কথা নয়।’
‘আমার হাতে সময় কম। যদি দেখানোর মতো অথেনটিক কিছু না থাকে তো আমি উঠব।’ জিলানী বললেন।
‘এই তো দেখাচ্ছি। আরেকটু সময় দিন প্লিজ।’
একথা বলে লোকটা যুবকটির হাত থেকে ব্রিফকেস নিযে টেবিলে রাখলো। জিলানী স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন। ভাবলেন আবার পিস্তল টিস্তল বের করবে না তো ! জিলানী তার বাম হাত কোমরে রাখলেন। যেখানে তাঁর গুলিভর্তি রিভলভার রয়েছে।
লোকটা ব্রিফকেস খুলে জিলানীর সামনে ঘুরিয়ে ধরল। দেখে জিলানীর তো চক্ষু চড়কগাছ! ব্রিফকেসভর্তি এক হাজার টাকার নোটের বান্ডিল ! জিলানী বললেন,‘এসব কী দেখছি ? আপনি কে ?’
‘ব্রিফকেসটা বড়, তবুও পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশি ধরল না। আপনাকে ফ্র্যাংকলি বলি। রিফাত আমার খুব ঘনিষ্ঠজন ।
সে একজন দক্ষ ও কর্মঠ লোক। সে না থাকায় আমি অলরেডি লসে পড়ে গেছি।’একথা বলে লোকটা একটু থামল।
‘থামলেন কেন ? বলুন কী বলতে চান !’ জিলানী বললেন।
‘কাইন্ডলি এই ব্রিফকেসটা নিন। রিফাতকে ছেড়ে দিন। নয়তো আমি সামনে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবো। আমি আরও দেবো।’
‘আপনাকে দেখেই বুঝে নিয়েছি আপনি রিফাতের কলিগ নন। ব্রিফকেস ভর্তি টাকা এনেছেন, নিশ্চয়ই কোন ধান্দাবাজির ব্যবসা আছে !’ জিলানী তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন।
‘ধান্দাবাজি হবে কেন ? আমি রিয়েল ব্যবসায়ী। আমার রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা আছে। ডেভেলপার আর কি ! রিফাত আমাদের শেয়ারহোল্ডার।’
জিলানীর মনে পড়ল, কোনো এক ডেভেলপার রেজাউদ্দিন সাহেবের বাড়িটি ভেঙে বহুতলা ভবন করতে চেয়েছিল। রেজা সাহেব সম্মত হন নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটিও হয়েছে। তার সাথে রিফাতেরও সংশ্রব ছিল। তাহলে এ সেই ডেভেলপার ! রিফাত তাদের শেয়ারহোল্ডার ! নিশ্চয়ই রিফাতের সাথে সাথে এই লোকও অপরাধে জড়িত, নইলে সে এতো টাকা দিতে চাইবে কেন ! কথায় বলে, ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’।
জিলানীর মনে পড়ল, কোনো এক ডেভেলপার রেজাউদ্দিন সাহেবের বাড়িটি ভেঙে বহুতলা ভবন করতে চেয়েছিল। রেজা সাহেব সম্মত হন নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটিও হয়েছে। তার সাথে রিফাতেরও সংশ্রব ছিল। তাহলে এ সেই ডেভেলপার ! রিফাত তাদের শেয়ারহোল্ডার ! নিশ্চয়ই রিফাতের সাথে সাথে এই লোকও অপরাধে জড়িত, নইলে সে এতো টাকা দিতে চাইবে কেন ! কথায় বলে, ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’।
‘হা হা… আমার সততার মূল্য মাত্র পঞ্চাশ লাখ টাকা ! এক কোটিও না !’ জিলানী ব্যঙ্গ করে মেকি হাসি দিয়ে বললেন।
‘না না। বলেছি তো, আরও দেবো। যান, কথা দিলাম পুরো এক কোটি দেবো। প্লিজ রিফাতকে কালই ছেড়ে দিন। সব তো আপনারই হাতে।’ লোকটি বিনয় করে বলল।
রাগে জিলানীর গা জ্বলে যাচ্ছে। চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে আসছে। হাতের আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হতে চাইছে। জিলানী যুবকটির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন,‘এই মিয়া স্যান্ডো, আমাকে তোমার পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দাও।’
স্যান্ডো লোকটার দিকে, অর্থাৎ মি: টিটি’র দিকে তাকালো। সে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।
যুবকটা বলে যাচ্ছে। এই ফাঁকে ইন্সপেক্টর জিলানী ক্যাফের নিচে অপেক্ষমান তাঁর দুই সহযোগী সোহরাব ও রাইসকে এসএমএস করলেন : চলে এসো। তারপর থানার ওসির নাম্বারে কল বাটন টিপে দিলেন। ওসি সাহেব কল রিসিভ করলে এখানকার সব কিছু শুনতে পাবেন।
‘স্যান্ডো যাও, ব্রিফকেস আর ব্যাগ স্যারের গাড়িতে দিয়ে এসো।’ লোকটা স্যান্ডোকে হুকুম দিলো।
এই ধৃষ্টতা জিলানী সহ্য করতে পারলেন না। তার মাথা দিয়ে যেন আগুন বেরুচ্ছে।
‘থামুন। ভেবেছেন কী ? জিলানীকে এতোই সহজে কেনা যায় ? সমাজের দুষ্ট ক্ষত ! কালপ্রিট কোথাকার !’ জিলানী জোরে এক ধমক লাগালেন।
লোকটা থতোমতো খেল। কথাটা যেন তার গায়ে লাগল। তার চোখ দুটো ক্ষোভে লাল হয়ে উঠলো। জিলানীকে বলল,‘মুখ সামলে কথা বলুন ইন্সপেক্টর। আমার রিচ কোথায় আপনি জানেন না।’
এসময় জিলানীর সহযোগী সোহরাব ভেতরে এসে জিলানীর পাশে দাঁড়াল। আরেক সহযোগী রাইস দাঁড়ালো বের হবার দরজায়। দেখে, তাদের বস ইন্সপেক্টর জিলানী বেশ উত্তেজিত হয়ে বলছেন, ‘সাট আপ। আপনার হয়তো জানা নেই আমি ক্রিমিনালদের কী অবস্থা করতে পারি। মি. টিটি, আসামী রিফাতের সাথে আপনিও অপরাধে জড়িত। আমার কাছে প্রাথমিক প্রমাণ আছে। দেখা যাচ্ছে এই স্যান্ডোকেও আপনি অপরাধে যুক্ত করেছেন।’
‘কী সব আবোল তাবোল বলছেন ? আপনি জানেন, হোম মিনিস্টার আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ?’
‘এইসব গান বাজনা অনেকেই করেন। আমি কান দেই না। হলেই বা কী !’
‘আমি আপনাকে দেখে নেবো।’ কথাটা বলেই মি. টিটি দাঁড়িয়ে গেলো।
‘হোয়াট !’ জিলানী চট করে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর রিভলভা হাতে নিয়ে গম্ভীরকন্ঠে বললেন, ‘মি: তওফিক, আপনার অন্য কীর্তিগুলো আমি পরে দেখবো। আপাতত: একজন নিষ্ঠাবান সিআইডি অফিসারকে ডিউটিরত অবস্হায় পঞ্চাশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে মামলার আসামি ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করছি।’
‘হোয়াট !’ জিলানী চট করে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর রিভলভা হাতে নিয়ে গম্ভীরকন্ঠে বললেন, ‘মি: তওফিক, আপনার অন্য কীর্তিগুলো আমি পরে দেখবো। আপাতত: একজন নিষ্ঠাবান সিআইডি অফিসারকে ডিউটিরত অবস্হায় পঞ্চাশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে মামলার আসামি ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করছি।’
‘কী ! খবরদার ! এই ভুল কাজ করবেন না। আমি টিটি কিন্তু আপনার চাকরি খেয়ে ফেলব।’তওফিক তালুকদার উত্তেজিত হয়ে বলল।
জিলানীর সহযোগী সোহরাব তওফিককে ধরার জন্য সামনে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন সময় স্যান্ডো এগিয়ে এসে তার পথ আটকে দাঁড়ালো। উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। এ অবস্থা দেখে ক্যাফের অনেক কাস্টোমার হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমে গেল। বয়-বেয়ারা সব গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কাইন্টারের পেছনে।
জিলানী রাইসকে ইশারা করলে রাইস ঘুরে সামনে এসে স্যান্ডোকে জাপটে ধরলো। জিলানী সোহরাবকে সাথে নিয়ে তওফিকের দিকে এগুলেন। হঠাৎ তওফিক নিজের পিস্তল বের করে দুজনের দিকে তাক করতে করতে বেরুবার দরজার দিকে দিল এক দৌড়। সোহরাব পিস্তলের ট্রিগার চাপতে উদ্যত হলে জিলানী তাকে ইশারায় নিবৃত্ত করলেন।
জিলানী চাইলেন না, তবু মি. টিটি’র অনভ্যস্ত দৌড়ের অদ্ভুত গতি দেখে না হেসে পারলেন না।
লাভ হলো না ভোঁ দৌড় দিয়ে। ততক্ষণে থানার পুলিশ চলে এসেছে রেইনবো’র দরজার গোড়ায়। পুলিশ মি. তওফিককে পিস্তলসহ ধরে ফেললো। পুলিশ ফোর্স যে চলে এসেছে তা জিলানী আগেই জেনেছেন মোবাইলে ম্যাসেজ দেখে। জিলানী স্যান্ডোকেও গ্রেফতার করালেন। পুলিশকে বললেন টাকাভর্তি ব্রিফকেস এবং তওফিকের পিস্তল জব্দ করতে।
এতক্ষণে রেইনবো’র কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাদের ধারণা ছিল যে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে শক্তিপ্রদর্শন চলছে।
দুটো গাড়ি একসাথে ছুটছে। সামনে মি: টিটি এবং স্যান্ডোকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি, পেছনে ইন্সপেক্টর জিলানীর জীপ— সহযাত্রী তাঁর দুই নিষ্ঠাবান সহযোগী।
[চলবে]
আরও পড়ুন :
বিধ্বংসী প্রহর,পর্ব-১
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব- ২
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব- ৩
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ৪
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ৫
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ৬
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ৭
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ৮
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ৯
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব- ১০
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ১১
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ১২
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ১৩
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ১৪
বিধ্বংসী প্রহর,পর্ব— ১৫
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ১৬
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ১৭
বিধ্বংসী প্রহর, পর্ব— ১৮