‘তাহমীনা ইয়াছমিন নূর’ আমার শুধু শিক্ষক নন, জীবনের প্রশিক্ষক

যে শিক্ষাগুরু চিরদিনের বর্তমান, তাঁকে নিয়ে স্মৃতির খেরোখাতা রচনা করা কষ্টসাধ্য।তবুও গতকালের বর্তমান তো আজকেরই অতীত,আজকেরই স্মৃতি।সেদিক থেকে স্মৃতিতে চির অমলিন আমার প্রিয়, অনন্য সাধারণ এক শিক্ষাগুরুকে নিয়ে লিখব আজ। কলেজ জীবনের অর্থনীতিতে থাকা কঠিন সব অঙ্ক,চিত্রের উর্ধ্বে গিয়ে যিনি আমাকে জীবন ও জীবনবোধ সম্পর্কে শিখিয়েছেন। ‘তাহমীনা ইয়াছমিন নূর’ রাংগুনিয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক।তাঁর কথাবার্তা, তাঁর পড়ানো সব আমাকে মুগ্ধ করে যেত সব সময়। যাঁর অসাধারণ ক্লাসরুমে বসে ৪৫ মিনিট ক্লাস করার সময় ভাবতাম,আমি এ মুগ্ধতায় এক জীবন নিমগ্ন থাকতে চাই। কিন্তু আমার কাছে সময় তো মাত্র দু’বছর। ম্যামকে দেখার মত, তাঁর প্রত্যক্ষ ক্লাস করার মত।কারণ স্কুল–কলেজ জীবনের নির্দিষ্ট গণ্ডি পেরিয়ে সবাই নতুন নতুন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রিয় শিক্ষক, শিক্ষকের সঙ্গে মুহূর্তবন্দী প্রতিটি সময়ের উপর দীর্ঘ যোগাযোগহীনতা একসময় একটা ধূলোর আস্তরণ ছড়িয়ে দেয়। তারপর কখনো-সখনো হঠাৎ দেখায় কিংবা এসব বিশেষ দিবসে আমাদের স্মরণ হয় তাঁদের কথা, যারা মসৃণ করেছিল জীবনের বন্ধুর পথ। কিন্তু আমার ইচ্ছে, আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল সম্পূর্নই তাঁর বিপরীত। আমি চেয়েছিলাম ম্যামের প্রতি ক্লাসরুমের ওই মুগ্ধতাকে চিরায়ত মুগ্ধতার রুপে রূপায়িত করতে।
ভিন্নভাবে তাঁর মনে জায়গা করবার প্রচেষ্টা। ওনার পাঠ্যবিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে, সবসময় ক্লাসে উপস্থিত থেকে, সাংস্কৃতিকভাবে সক্রিয় থেকে আমি ধীরে ধীরে ম্যামের মনে আমার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি।কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষ দিনে সর্বোচ্চ পুরস্কার জেতার খুশিতে ম্যাম আমাকে ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করে দিয়ে বলেছিলেন,এটা তোমার উপর।সেদিন ম্যামের পা ছুঁয়ে প্রথম প্রণাম করেছিলাম, সে প্রশান্তি, সে আনন্দ—আমি আজও কোথাও খুঁজে পাই নি।
অতঃপর, শুরু করি তাঁর বিষয়ে তাঁর ক্লাসের সবার চেয়ে আলাদা হয়ে ওঠার চেষ্টা।ভিন্নভাবে তাঁর মনে জায়গা করবার প্রচেষ্টা। ওনার পাঠ্যবিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে, সবসময় ক্লাসে উপস্থিত থেকে, সাংস্কৃতিকভাবে সক্রিয় থেকে আমি ধীরে ধীরে ম্যামের মনে আমার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি।কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষ দিনে সর্বোচ্চ পুরস্কার জেতার খুশিতে ম্যাম আমাকে ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করে দিয়ে বলেছিলেন,এটা তোমার উপর।সেদিন ম্যামের পা ছুঁয়ে প্রথম প্রণাম করেছিলাম, সে প্রশান্তি, সে আনন্দ—আমি আজও কোথাও খুঁজে পাই নি।

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে আমি শহরে চলে আসি,তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ধরে রাখতে প্রায়শই কল দিতাম,খুঁজে নিতাম আমার আপন প্রশান্তি। একদিন ঠিকানা জেনে ওনাকে দেখতে চলে যাই বাসায়। গল্প জমাই অতীতের, কলেজের, ওনার ।সেদিন শিক্ষক সত্তার বাইরে গিয়ে আমি ম্যামের মানুষ হিসেবে সুন্দর সত্তার আবিষ্কার করি, ঘরে বাইরে সমভাবে সুন্দর একজন মানুষকে খুঁজে পাই। অতঃপর ভালোবাসার প্রগাঢ়তা সম্পর্ককে মলিন হতে দেয় না।ম্যামও তাঁর অন্যথা করেন নি। উনি আমার আগ্রহের যথাযথ দাম দিয়েছেন,স্বপ্ন দেখিয়েছেন,পথ দেখিয়েছেন,ভুল-সঠিকের দ্বন্দ্ববিভ্রাট দূর করেছেন।
ওনার প্রতিটি কল রেকর্ডিং আমার মন খারাপের অব্যর্থ মহৌষধ। আমি ভীষণ অনুপ্রেরণা পাই, পুনর্বার জেগে উঠি। আমার জীবনের ভেঙে পড়া, হেরে যাওয়া মুহূর্তে একটি কোমল হাত মাথার উপর আবিষ্কার করেছিলাম, তিনি ম্যাডাম। যিনি বলেছিলেন “তুমি হয়তো জিতবে না,কিন্তু হেরেও তুমি হারবে না” ওনাকে দেখার পর থেকে আমার প্রতিটি জয়ের নেপথ্যের অন্যতম অংশীদার উনিই হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
ওনার প্রতিটি কল রেকর্ডিং আমার মন খারাপের অব্যর্থ মহৌষধ। আমি ভীষণ অনুপ্রেরণা পাই, পুনর্বার জেগে উঠি। আমার জীবনের ভেঙে পড়া, হেরে যাওয়া মুহূর্তে একটি কোমল হাত মাথার উপর আবিষ্কার করেছিলাম, তিনি ম্যাডাম। যিনি বলেছিলেন “তুমি হয়তো জিতবে না,কিন্তু হেরেও তুমি হারবে না” ওনাকে দেখার পর থেকে আমার প্রতিটি জয়ের নেপথ্যের অন্যতম অংশীদার উনিই হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আমি নিজের জন্য নয়, বরং ম্যামের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ছুঁটেছিলাম। উনি আমার শুধু শিক্ষক নন, জীবনের প্রশিক্ষক।আমার আত্মার আত্মীয়,আমার হতাশার অনুপ্রেরণা,জেতার আনন্দ, অনুভূতির অভিধান,ভেঙে পড়ার দিনগুলিতে দুর্দমনীয় সাহস,হারানো অতীত,সুন্দর বর্তমান,অনির্ধারিত ভবিষ্যত।
আজকে আমি যা,তার পেছনে ম্যামের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের সম্পর্কের এই দৃঢ়তা দেখে সবাই যখন বলে,ছাত্র-শিক্ষকের এমন সম্পর্ক,এমন শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসার অধিকার দেখি নি কোথাও,গর্বে তখন আমার বুকটা ভরে ওঠে। মাকে ভালোবাসলে যেমন প্রতিদিন মা দিবস,শিক্ষককে ভালোবাসলেও তেমনি প্রতিদিন শিক্ষক দিবস।
আজকে আমি যা,তার পেছনে ম্যামের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের সম্পর্কের এই দৃঢ়তা দেখে সবাই যখন বলে,ছাত্র-শিক্ষকের এমন সম্পর্ক,এমন শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসার অধিকার দেখি নি কোথাও,গর্বে তখন আমার বুকটা ভরে ওঠে। মাকে ভালোবাসলে যেমন প্রতিদিন মা দিবস,শিক্ষককে ভালোবাসলেও তেমনি প্রতিদিন শিক্ষক দিবস। যে আমার আমিকে চিনিয়েছেন আপন হাতে,তার হাত আমার মস্তকস্পর্শ করে থাকুক সর্বদা। তিনি আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক হিসেবে চিরদিন ভাস্বর থাকুক। ঈশ্বর ওনাকে সুস্থ, সুন্দর রাখুক।
শুভ্রা চক্রবর্তী, অনার্স ২য় বর্ষ, চট্টগ্রাম কলেজ,চট্টগ্রাম।
যাঁরা আমাদের স্বপ্নকে, আমাদের জীবনের পথচলারকে হাত ধরে শিখেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন সর্ব সময়ে, তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ‘বইচারিতার আয়োজন ‘ স্মৃতিতে আমার প্রিয় শিক্ষাগুরু’। আপনি আপনার প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে আমাদের কাছে লিখে পাঠিয়ে দিন। সঙ্গে পাঠাবেন শিক্ষকের ছবি, নিজের ছবি, যদি শিক্ষকের সঙ্গে কোনো ছবি থেকে থাকে। থাকবে সেরা ১০জন লেখকের জন্য থাকবে আকর্ষণীয় বই ও সনদ। লেখা পাঠাবেন: boicharita@gmail.com