ঝিমিট স্যার আমাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন

শিক্ষকরা হলেন আমাদের জীবনে চলার পথে অন্যতম প্রধান পথপ্রদর্শক এবং অভিভাবকস্বরুপ। সংক্ষিপ্ত জীবনে চলার পথে নানা মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। আমাদের প্রত্যেকের বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক থাকেন, তাঁরা প্রত্যেকে আমাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে সঠিক পথে চলতে সহায়তা করেন। তাঁরা প্রত্যেকে আমাদের কাছে সমান শ্রদ্ধেয়। কিন্তু প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের অন্তরে কোনো এক শিক্ষকের জন্য বিশেষ স্থান থাকে। তেমনি স্মৃতিতে আমার একজন প্রিয় শিক্ষাগুরু জনাব ঝিমিট ঝিমিট চাকমা। তিনি মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
আমি যখন ২০১৮ সালে বান্দরবান জেলা থেকে রাঙামাটি জেলায় মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলাম তখন খুবই ভীতু ছিলাম। কোনো শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার সাহসটুকু পেতাম না। কিন্তু ঝিমিট স্যার আমাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন।
তিনি আমাদের কেবল শিক্ষা দান করেননি।তিনি আমার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা গরীব শিক্ষার্থীদের আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ সাহায্য করেছিলেন। এই বিষয়টা আমাকে খুব বিস্মিত করে তুলতো। তিনি আমাকে নতুন একটা জীবন গড়তে সাহায্য করেছিলেন। তিনি আমাকে এটা শিখিয়েছেন যে কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। তিনি আরও শিখিয়েছেন যে পোশাক কারোর আসল পরিচয় দেয় না,,প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় মানুষের কাজের মাধ্যমে। তিনি এটাও শিখিয়েছেন যে কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয় এবং কীভাবে মানুষকে সাহায্য করতে হয়।
যে কারণে তিনি আমার প্রাণ প্রিয় শিক্ষক:
তিনি আমাদের কেবল শিক্ষা দান করেননি।তিনি আমার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা গরীব শিক্ষার্থীদের আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ সাহায্য করেছিলেন। এই বিষয়টা আমাকে খুব বিস্মিত করে তুলতো। তিনি আমাকে নতুন একটা জীবন গড়তে সাহায্য করেছিলেন। তিনি আমাকে এটা শিখিয়েছেন যে কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। তিনি আরও শিখিয়েছেন যে পোশাক কারোর আসল পরিচয় দেয় না,,প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় মানুষের কাজের মাধ্যমে। তিনি এটাও শিখিয়েছেন যে কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয় এবং কীভাবে মানুষকে সাহায্য করতে হয়।
তাঁর আদর্শ চরিত্র, কথা বলার ভঙ্গি, শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং হৃদয়ের উষ্ণতা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করতো।সাধারণ মানুষের মাঝে শিক্ষাদানের মাধ্যমে সত্যিকারের মানুষ হিসাবে সচেতন করে তোলাই ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত। তিনি আমার উপদেষ্টা এবং জীবন গড়ার কারিগর । তিনি নিজের ব্যক্তিত্বকে বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন করেননি। সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলের প্রকাশ ঘটে তাঁর চরিত্রে।

সব শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের এক একটা অভিভাবক। কিন্তু সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ‘বাবা’ ডাকার সুযোগ টা দেয় না। যে সুযোগটা আমাদের প্রধান শিক্ষক আমাকে এবং আমার মতো সকল শিক্ষার্থীদের দিয়েছিলেন। আমার এখনো মনে পড়ে আমরা তাঁকে ‘বাবা’ বলে ডাকতাম। যেটা আমাকে সব থেকে বেশি আনন্দিত করে তুলত। আমি জন্মদাতা মা-বাবাদের ছেড়ে হোস্টেলে থাকলেও তিনি আমাকে কখনো মা–বাবার অনুপস্থিতির বেদনা বুঝতে দেননি। যেকোনো সমস্যায় তিনি বিরক্ত না হয়ে সকলকে সুন্দরভাবে সাহায্য করতেন। আজকের আমার এই অবস্থানের পিছনে আমার প্রাণ প্রিয় শিক্ষাগুরুর অবদান অপরিসীম। একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়,তাঁর পোশাক দেখে কখনো আমাদের মনে হতো না যে তিনি একজন প্রধান শিক্ষক। কারণ, তিনি খুবই সাধারণ ভাবে থাকেন। তিনি শুধু আমাদের জন্য সবকিছুকে ত্যাগ করতেন। তিনি বান্দরবান,লামা,আলীকদম এবং রুমা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গরীব শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতেন নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং তাদের পড়াশোনা করাতেন।
একটা ঘটনা এখনো আমাকে কাদাঁয়, একদিন তিনি আমাদেরকে পোশাক কিনে দিয়েছিলেন অথচ তাঁর নিজেরই জামা ছেঁড়া ছিল। আমরা স্যারকে অনেক অনুরোধ করলাম যে, তিনি যেন নিজের জন্য কাপড় কিনেন। তাঁর উত্তর ছিল,‘সন্তানরা হাসি–খুশি থাকলে বাবার আর কিছুই লাগে না’। এমন কথা আমি কেবল তাঁর মুখ থেকেই শুনেছিলাম। তিনি সত্যি মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমি তাঁকে এখনো মন থেকে স্মরণ করি তবে একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন বাবা হিসেবে।
একটা ঘটনা এখনো আমাকে কাদাঁয়, একদিন তিনি আমাদেরকে পোশাক কিনে দিয়েছিলেন অথচ তাঁর নিজেরই জামা ছেঁড়া ছিল। আমরা স্যারকে অনেক অনুরোধ করলাম যে, তিনি যেন নিজের জন্য কাপড় কিনেন। তাঁর উত্তর ছিল,‘সন্তানরা হাসি–খুশি থাকলে বাবার আর কিছুই লাগে না’। এমন কথা আমি কেবল তাঁর মুখ থেকেই শুনেছিলাম। তিনি সত্যি মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমি তাঁকে এখনো মন থেকে স্মরণ করি তবে একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন বাবা হিসেবে।
তিনি ছিলেন একজন সৎ ও পরিশ্রমী লোক। তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি ছিল মন কেড়ে নেওয়ার মতো এবং বিজ্ঞানসম্মত। তিনি কেবল পাঠদানের মধ্যে আমাদেরকে বন্দি রাখেননি। বরং পড়াশোনার পাশাপাশি সকল ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। গান,নাচ এবং সব ধরনের খেলাধুলা এবং বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
তিনি আপন ব্যক্তিত্বের মহিমায় আমার মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। একজন প্রধান শিক্ষক কিভাবে একজন শিক্ষার্থীর প্রান প্রিয় শিক্ষাগুরু হতে পারে তার প্রধান উদাহরণ ঝিমিট স্যার। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যিনি আলোর সন্ধান দিচ্ছেন তার সামনে অন্ধকার মাথা নত করবেই। ঝিমিট স্যার আমার শিক্ষাজীবনের অপরিসীম প্রেরণার উৎস।
তিনি আপন ব্যক্তিত্বের মহিমায় আমার মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। একজন প্রধান শিক্ষক কিভাবে একজন শিক্ষার্থীর প্রান প্রিয় শিক্ষাগুরু হতে পারে তার প্রধান উদাহরণ ঝিমিট স্যার। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যিনি আলোর সন্ধান দিচ্ছেন তার সামনে অন্ধকার মাথা নত করবেই। ঝিমিট স্যার আমার শিক্ষাজীবনের অপরিসীম প্রেরণার উৎস।
তাঁর সম্পর্কে আমি হাজারটা পাতা লিখলেও হয়তো সম্পূর্ণটা প্রকাশ করতে পারব না। আমার অন্তর থেকে ঝিমিট স্যারকে জানাই সশ্রদ্ধ সম্মান যিনি আমাকে সঠিক পথে যাওয়ার জন্য আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।
সং রুং ম্রো, একাদশ শ্রেণি, পুলিশ লাইন কলেজ, রাজশাহী।
পেশায় শিক্ষকতা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সাহিত্য চর্চায় চাঙমা ভাষা গবেষণা, নাটক, কবিতা, ছড়া রচনায় তাঁর অবদান অপরিসীম। তবে উল্লিখিত নামের বানান ঝিমিট চাকমা বদলে ঝিমিত ঝিমিত চাকমা।