‘মা, তুমি এবারেও ইনশাআল্লাহ জিতে যাবে’

১৯৯৫ সালের কথা। তখন স্কুলে পড়ি। জীবন পঞ্জিকার শুভ্র পাতাগুলোতে সব রং পেন্সিলে আঁকিবুঁকি কেটে নিতেই সময় গড়িয়ে যেত বেশ। মেঘের কোলে দলুলতে থাকা রৌদ্র বালিকার হাসি পাঁকড়ে নেবার ধূম চলতো সেই সকাল থেকে সাঁঝ অবধি। সোনা ঝরানো বিকেলে কর্মব্যস্ত শহরের আকাশের আঁচলে হেলে পড়া সূর্য কিরণ সেই সময় বাড়ির পাশের কৃষ্ণচূড়ার ঝিরিঝিরি পাতার ওপর লুকোচুরি খেলায় থাকতো মত্ত। অপলক নয়নে রোজকার এই মনোহরী জাদু দেখে যেতাম কেবল। আর দেখতে দেখতেই এক সময় ঝুপ করে সন্ধ্যা রাণী তার রঙ্গমঞ্চের পাটে আসন গেড়ে বসত। হেঁসেল ঘরের তৈজসপত্রের ঠুংঠাং ছন্দের সাথে মিলে যেত বিদায়ী দিনের বিরহী গল্প। তেমনি এক সন্ধ্যেবেলায়, প্রতিদিনের মতোই যথারীতি পড়তে বসেছি। সেই সময় লোডশেডিং হতো প্রচুর। জোনাকীর মতো হ্যারিকেনের মৃদু টিমটিমে আভায় লেখাপড়ার কাজটা চালিয়ে নিতে হতো মায়াময় সাঁঝের প্রহরগুলোতে। মিহি তন্তু দানায় বুনে নেওয়া সন্ধ্যারা সব মুখরিত হয়ে উঠত অসংখ্য কচিকন্ঠের কোরাসে। হঠাৎ তাতে ছন্দপতন হলেই হাঁক ছুটত বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ্যর। ‘কী হলো? চুপ কেন? জোরে পড়’। কপট ধমকে ফের আঁছড়ে পড়ত বিদ্যারাণীর পাঠের বন্যা। অনিন্দ্য সেই ক্ষণগুলো মেতে উঠত এমন করেই। আমাদের বাড়িও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সবিতা রাণী ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে পড়বার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হত বইপত্র বগল দাবা করে ছুটোছুটি। আমার পড়ার ঘরে জ্বালিয়ে দেওয়া হতো ধূপ। পাছে রক্তপায়ীর দল বিদ্যা আহরণের একনিষ্ঠ যাত্রা পথের অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়৷ ঘরের এক কোণে রেখে দেওয়া ধূপদানি থাকে ধোঁয়ার কুন্ডলী পাঁকিয়ে উঠত। দেখলে মনে হত, আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ থেকে সেই বিরাটকায় দৈত্য বেরিয়ে এসে এখুনি শুধোবে, ‘আদেশ করুন আমার মালিক’! তবে এমন কিছুই হতো না। ছেলেমানুষী ভরা অলীক কল্পনা থাকে বাস্তবে ফিরে আসতাম দ্রুতই। ধোঁয়ার ঝাঁঝে চোখ জ্বলুনি করে উঠত সঙ্গে জাগত কাঁশির তোড়। তড়িঘড়ি করে গলায় এক গ্লাস জল ঢেলে উপশম মিলত খানিক। তেমন করে সেইদিনও বসেছি। শীতলপাটি বিছিয়ে তার ওপর ছড়িয়ে রাখা রয়েছে রাজ্যের বইপত্র। কাঠবেড়ালির মতো লাফিয়ে বেড়ালাম কখনও বাংলা, ইংরেজির কাঠখোট্টা ব্যাকারণে, কখনও ইতিহাসের লতাপাতায় তো কখনও বিজ্ঞান বইয়ের নব নব আবিষ্কারের কালজয়ী কাহিনির মাঝে। অবশেষে গতির রশিখানা টেনে নিলাম খটমটে গণিত বইয়ের পাতায়। বলে রাখি, অংক আমার বরাবরই খুব অপছন্দের বিষয় ছিল।
মায়ের গোটা জীবনকে একটা আতসী কাঁচের নিচে ধরলে বুঝি মনে হবে, প্রলংকয়ী ঝড়ে উত্তাল সাগরের বুকের অসম ঢেউ সাঁতরে চলা কোন নির্ভীক ডিঙি নৌকা৷ ‘যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষন আঁশ’। এই প্রবাদবাক্যটা মায়ের সাথে মিলে যায় খুব করে।
কোনোমতে সত্তরের ঘরে মার্কস তুলে নিতে পারলে নিজেকে একেবারে বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার বলে মনে হতো। বলাবাহুল্য, আমার কোন গৃহশিক্ষক ছিল না। আমার পড়ালেখা চলতো আমার মায়ের কাছেই। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা এবং তিনি বিদ্যালয়ে গণিত পড়াতেন। যেখানে গুরু রীতিমতো সাপলুডুর ছক দাবড়ে বেড়ায়, সেখানে শিষ্যের এই করুণ হাল দেখে আমাকে নিয়ে সকলে ঠাট্টা করে নিতে ছাড়ত না এতটুকু৷ প্রথম প্রথম রাগ, অপমান দুটোই অনুভূত হলেও পড়ে সয়ে গিয়েছিল বেশ। যা বলছিলাম, তাহলে, রোজকার মতো সেদিনও বসেছি অংক বই খাতা নিয়ে। পরদিন গণিতের ক্লাস টেস্ট৷ তাই আজ প্রস্তুতি ঝালাই করে নেবার পালা৷ আমার সামনে আমার মা বসে। গম্ভীর মুখ। আষাঢ়ের মেঘের মতো ঘন কালো চুল মায়ের পিঠ ছাপিয়ে আঁধারের বন্যা নামিয়েছে। যেন পুরো সন্ধ্যেবেলা মায়ের চুলের গোছাতে মুখ লুকিয়ে নিয়েছে। মায়ের পরণের নীল শাড়ি। ওতে যেন বহতা স্রোতস্বিনীর নীলিমার ঢেউ জেগেছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে উপন্যাসের কোন অটল চরিত্র বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবে মূর্তমান হয়ে উঠে এসেছে। মায়ের ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, কঠোরতা আর কোমলতার অনন্য মিশ্রণ। এক আশ্চর্য রকমের সংকর ধাতুতে গড়া কোন প্রতিমূর্তি যেন আমার মা। হিমালয়ের মতো এই অবিচল এই মানুষটা জীবনের যেকোন প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করেছেন চরম জোরসে। মায়ের গোটা জীবনকে একটা আতসী কাঁচের নিচে ধরলে বুঝি মনে হবে, প্রলংকয়ী ঝড়ে উত্তাল সাগরের বুকের অসম ঢেউ সাঁতরে চলা কোন নির্ভীক ডিঙি নৌকা৷ ‘যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষন আঁশ’। এই প্রবাদবাক্যটা মায়ের সাথে মিলে যায় খুব করে। মাকে যেমন আমরা ভালোবাসি মনপ্রাণ দিয়ে তেমনি তাকে সমীহ করি পরম যত্নে। যাইহোক, মা আমাকে সেই মুহূর্তে বীজগণিত করাচ্ছিলেন। চরম চরম সব সূত্র। কোনটাই ভালো করে মনে রাখা তো দূর, আমার মাথামোটা বুদ্ধির কাছে ধোপেও টিকছে না। মাথার ওপর দিয়ে সব উড়ে যাচ্ছিল এমন অবস্থা। মনেমনে প্রমোদ গুণী। আজ নির্ঘাত কপালে দুঃখ আছে। কাল পরীক্ষা, আজ যদি এই হাল হয়, তাহলে মা আমাকে আস্ত…
“কী হলো এত সময় লাগছে কেন?” মায়ের গম্ভীর গলার স্বর ভেসে আসে। ঢোঁক চেপে বলি, “এই তো, মা…”
“জলদি। এক্সামে এত সময় কী দেবে তোমাকে?” মায়ের কথায় মাথা নাড়িয়ে নেই সামান্য এরপর ঝুঁকে পড়ি খাতার ওপর। ভয়ে, অভিমানে চোখ ফেটে জল চলে আসছে। কিচ্ছু মনে পড়ছে না। মাথার মাঝে গণিত সমীকরণ সব সুঁতোর মতো প্যাঁচ খেয়ে গেছে। কাল কী হবে জানি না, তবে আজ তো উত্তম মধ্যম একদম পাক্কা আমার জন্য। আসন্ন বিপদের কথা ভেবে শংকিত হই। কী করে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছিলাম, তো তখুনি ফিচেল বুদ্ধি মাথায় খেলে গেল। মনে পড়ল, গত পরশু এই একই অংকগুলো অন্য খাতায় করা রয়েছে। কোনমতে ওটা মায়ের চোখ এড়িয়ে খুলে নিতে পারলেই হলো, ব্যাস! আজকের মতো পার পেয়ে যাব পাক্কা। মায়ের দিকে দেখি। মা গভীর মনোযোগ দিয়ে হাতে থাকা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টিয়ে নিচ্ছিল। পিঁপড়ের মতো চোখের মণি দুটো দৌড়ে বেড়াচ্ছিল ওটার পৃষ্ঠার ওপর। এই সুযোগ, আস্তে করে দুটো বইয়ের নীচের থেকে সেই খাতাটি কৌশলে বের করে পাশে লুকিয়ে নেই। এরপর খুব সাবধানে ওটাকে খুলে নেই চোখের সামনে। ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে এলো। আরেকটু এদিক সেদিক করে ওটাকে মেলে নিতেই উন্মেলিত হলো আমার সাত রাজার ধন। ফটাফট সাদা খাতার পাতায় গোটাগোটা অক্ষরে তুলে নিলাম ওসব। যাক, হয়ে গেলো। এবারে উৎসাহ ভরে মায়ের দিকে এগিয়ে দেই খাতাটা। সবগুলো অংক সঠিক হয়েছে। হবারই কথা। বেশ ফুরফুরে লাগছিল। তবে কেন যেন জড়তা লাগছিল একরকম। মনের মাঝে খচখচানি টের পাই তবে পরমুহূর্তেই ওটাকে আবার তুড়ি মেরে উড়িয়েও দেই৷ মা খাতা দেখা শেষ করেছে এরপর ওটাকে আমার দিকে এগিয়ে দিতেই খপ করে পাকড়ে নেই। শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলাম তবে! হাল্কা মেজাজে পরের দিনের রুটিন গুছিয়ে নিতে থাকি এরপর। ব্যাগ গোছানো হয়ে গেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, মা একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কী ব্যাপার? একটু থতমত খেয়ে যাই। ভয়ও লাগে। মায়ের চোখের এই স্থির ভাষা আমি খুব চিনি। আমতা আমতা করে বলি, “কিছু বলবে মা?”
মনে পড়ল, গত পরশু এই একই অংকগুলো অন্য খাতায় করা রয়েছে। কোনমতে ওটা মায়ের চোখ এড়িয়ে খুলে নিতে পারলেই হলো, ব্যাস! আজকের মতো পার পেয়ে যাব পাক্কা।
” হুম”। একটা কথা জানতে চাই। সত্যি বলবে?”
আমার ভেতরটা কেঁপে উঠল সেই কথায়। মা কী কিছু টের পেয়ে গিয়েছে? আরে নাহ! তাহলে তো তখুনি বলতো। তবে? ভয়েভয়ে বলি, “কী?”
—অংকগুলো নিজে করেছ?
ভ্যাবাচাকা খেয়ে যাই। তবে এবার আর মিথ্যের আশ্রয় আর নেই না। মাথা নিচু করে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে “না” বলি আমি।
“এদিকে এস।” মায়ের কথায় একপা দুপা করে সামনে এগিয়ে যাই। এবার আর রক্ষা নেই। আজ ফেঁসেছি। একে তো পারিনি তারওপর আবার দেখে দেখে অংক করা। আজ যে আমার দশা কী হবে? বুকের ভেতর ধরাস ধরাস করছিল। এর মাঝেই মায়ের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। মায়ের শরীর থেকে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগছে। খুব অবাক করা বিষয়, এই গন্ধ কেবল মায়ের শরীর থেকেই আসে। যাইহোক, সেই মুহুর্তে আসলে নিজের অপরাধের দণ্ড ভোগ করা ছাড়া অন্য কোন কথা মাথায় আসছিল না। চোখ বুঁজে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে থাকি।
“মা, শোন,” মায়ের কোমল কন্ঠ আমার কান ছুঁয়ে যায়। দারুণ বিস্ময় নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি মা, আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে সেই দৃষ্টিতে কোন রাগ বা ক্ষোভ নেই বরং সেখানে সহানুভূতির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আমার কাঁধে হাত রাখেন মা। এরপর বলেন
কাউকে ফাঁকি দিয়ে নিজে কখনো জেতা যায় না, মা। আর জীবনে ভুল পথ আগলে নিয়ে বড় কোনো সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নয় বরং নিজেকে একজন ‘মানুষ’ হিসেবে গড়ে তোলাটাই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তা নাহলে ক্ষণিকের এই মিথ্যে সাফল্য ভবিষ্যতে তোমাকে তোমার বিবেকের সামনে দাঁড়াতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, জীবনে চলতে গেলে নিজের কাছে নিজে স্বচ্ছ থাকাটা সবচাইতে জরুরি। বুঝলে?
—কাউকে ফাঁকি দিয়ে নিজে কখনো জেতা যায় না, মা। আর জীবনে ভুল পথ আগলে নিয়ে বড় কোনো সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নয় বরং নিজেকে একজন ‘মানুষ’ হিসেবে গড়ে তোলাটাই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তা নাহলে ক্ষণিকের এই মিথ্যে সাফল্য ভবিষ্যতে তোমাকে তোমার বিবেকের সামনে দাঁড়াতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, জীবনে চলতে গেলে নিজের কাছে নিজে স্বচ্ছ থাকাটা সবচাইতে জরুরি। বুঝলে?
জানিনা, কথাটাতে কী ছিল, তবে এতটুকু বুঝলাম, এই কথাটার মাঝে জীবনের নিগূঢ় নির্যাস লুকিয়ে। জীবন সমরক্ষেত্রের যুদ্ধ লড়ে যেতে হলে এই পাঠ আমাকে আত্মস্থ করে নিতে হবে খুব করে। মায়ের দিকে আবার দেখি। শান্ত মুখে এক চিলতে হাসি। যেন এক টুকরো জোৎস্না ঝুলে রয়েছে সেখানে। কেন জানিনা, চোখ আপনাআপনি অশ্র সজল হয়ে উঠল। এক তীব্র অপরাধবোধ গ্রাস করছিল আমাকে। মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি এবার। কান্না ভেজা কন্ঠে বলি, “আমার ভুল হয়ে গিয়েছে মা।” মা আলতো করে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আজ জীবনের এতটা সময় পার করে এলেও কঠিন সময়গুলোতে সেই একই পরশ আমি আজও অনুভব করি। আর হ্যাঁ, সেই দিন থেকে শুরু। মায়ের বলা এই কথা রক্ষাকবচের ন্যায় আমি আগলে নেই আমার হৃদয়ে। পিছু ফিরতে হয়নি আমাকে আর! সত্যি। নিদারুণ কঠিন সব পরিস্থিতি উতরে গিয়েছি অনায়সে, হাসিমুখে। এটা সত্যি, জীবনে শিক্ষার কোনো শেষ নেই। অনেক প্রিয় শিক্ষকের প্রিয় মুখ হৃদয় ছাঁচে গেঁথে আছে আমার সত্যি। কিন্তু যে মানুষটার নাম আমার মুখের বোলে ফুটেছে সর্বপ্রথম, যে মানুষটার হাতে হাত রেখে পাটখড়ি ঘুরিয়ে আমি প্রথম বর্ণ লিখতে শিখেছি, যার দৃঢ় আঙুল পাঁকড়ে চলতে শিখেছি, যার প্রত্যয়ে ভর করে নিজেকে চিনতে শিখেছি সে হলো আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক, আমার মা। মা আমাকে শিখিয়েছেন আত্মবিশ্বাসের পাঠ, আত্মসম্মানের পাঠ। বয়ে যাওয়া জীবন সমুদ্র তীরে লুটিয়ে থাকা ছোটবড় সম্পর্কের সব বর্ণিল নুড়ি পাথরকে পরম যত্নে আগলে তাকে বিনি সুঁতোয় কী করে যত্ন করে গেঁথে নিতে হয় সেই বুনন শৈলীও শিখেছি আমি আমার মায়ের কাছে থেকেই। মা আমাকে শিখিয়েছেন সহনশীলতা, প্রবল ঝড়ে নুঁয়ে পড়া প্রকাণ্ড বৃক্ষ হয়ে নয় বরং বৈরী পরিবেশে অবরুদ্ধ কঠিন শাসন ভেদ করে জন্ম নেওয়া শিশু তরুর মতো মাথা উঁচিয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখবার সমর কৌশল আমি আমার মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি। মায়ের প্রতিটি কথা, প্রতিটি উপদেশ, প্রতিটি শাসন আমার চলার পথের পাথেয়। মা আমার শুধু শিক্ষক নয়, বরং আমার জীবনে দেখা সবচাইতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। যার জ্ঞান বিলিয়ে যাওয়ার আলোকবর্তিকা আজও একই ভাবে সমুজ্জ্বল। আজও মাকে দেখি আর শিখে যাই জীবনের নবনব পাঠ। মা বর্তমানে নীরব ঘাতক ক্যানসার ব্যাধির সাথে লড়ছেন। অত্যন্ত অবাক করা বিষয়, এই নিদারুণ অবস্থায় আমরা হেলে পড়লেও মা কিন্তু হেলে পড়েনি এতটুকু। অবিচল সাহসী এই যোদ্ধা জীবনের এই লগ্নে এসে ফের ঘুরে দাঁড়াবার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। শান্ত সেই চোখ জোড়ায় আবারো জেগেছে যুদ্ধ জয়ের নেশা।
মায়ের প্রতিটি কথা, প্রতিটি উপদেশ, প্রতিটি শাসন আমার চলার পথের পাথেয়। মা আমার শুধু শিক্ষক নয়, বরং আমার জীবনে দেখা সবচাইতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। যার জ্ঞান বিলিয়ে যাওয়ার আলোকবর্তিকা আজও একই ভাবে সমুজ্জ্বল। আজও মাকে দেখি আর শিখে যাই জীবনের নবনব পাঠ। মা বর্তমানে নীরব ঘাতক ক্যানসার ব্যাধির সাথে লড়ছেন। অত্যন্ত অবাক করা বিষয়, এই নিদারুণ অবস্থায় আমরা হেলে পড়লেও মা কিন্তু হেলে পড়েনি এতটুকু। অবিচল সাহসী এই যোদ্ধা জীবনের এই লগ্নে এসে ফের ঘুরে দাঁড়াবার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। শান্ত সেই চোখ জোড়ায় আবারো জেগেছে যুদ্ধ জয়ের নেশা।
সত্যি, মা, তুমি পারোও বটে! কী করে পারো জানি না, তবে তোমাকে দেখে যে অনুপ্রেরণা পাই তা বলে বোঝানো অসম্ভব। মাগো, তোমার থেকে এমন আরও অনেক কিছু শিখে নিতে চাই। জীবনকে টক্কর দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই এমন আরও অনেক হার না মানা সব যুদ্ধের গল্প। আমি জানি, মা তুমি এবারেও ইনশাআল্লাহ জিতে যাবে। সঙ্গে জিতিয়ে দেবে আমাদেরও। তোমাকে যত দেখি ততই শিখে নেই এক অমোঘ মন্ত্র। তাহলো, কাপুরুষের মতো পিছুপা হয়ে নয় বরং বীরের মতো লড়াই করে বিজয়ীর হাসি হেসে নেওয়ার নামই জীবন। আর এই কঠিন পাঠ তুমি ছাড়া পৃথিবীর কোন শিক্ষকের পক্ষে এত সহজে পড়ানো সম্ভব নয়৷ সত্যি!
যাঁরা আমাদের স্বপ্নকে, আমাদের জীবনের পথচলারকে হাত ধরে শিখেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন সর্ব সময়ে, তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ‘বইচারিতার আয়োজন ‘ স্মৃতিতে আমার প্রিয় শিক্ষাগুরু’। আপনি আপনার প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে আমাদের কাছে লিখে পাঠিয়ে দিন। সঙ্গে পাঠাবেন শিক্ষকের ছবি, নিজের ছবি, যদি শিক্ষকের সঙ্গে কোনো ছবি থেকে থাকে। থাকবে সেরা ১০জন লেখকের জন্য থাকবে আকর্ষণীয় বই ও সনদ। লেখা পাঠাবেন: boicharita@gmail.com