আমার গ্রাম ছোট সিঙ্গীয়া

আমার গ্রাম ছোট সিঙ্গীয়া। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের একটি গ্রাম। দু’পাশে বিস্তৃত ফসলের মাঠের মাঝ বরাবর পাকা রাস্তা সোজা চলে গেছে ছোট্ট একটি বাজারে নাম তার লাহিড়ী হাট।আশেপাশে ছোট ছোট কয়েকটি গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের জীবনযাত্রার পরিচালিত হয় এই বাজারটিকে ঘিরে।বড় গরুর হাট,ছাগলের হাট,খাঁটি মধু, বাঁশে তৈরি সামগ্রী নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের জন্য পরিচিত এই বাজারে সব সময় মানুষের সরগম লেগে থাকে।

দেশের উওরের ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর ঐতিহাসিক লাহিড়ীহাট। ঠাকুরগাঁওবাসীর কাছে খুব পরিচিত এই বাজারটি। কিছুটা আধুনিক, কিছুটা গ্রামীণ মিশ্রিত সংস্কৃতি নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য সাক্ষী হয়ে। ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তেভাগা আন্দোলনকালে জোতদাররা চারজন কৃষকে হত্যার ইতিহাস মিশে আছে লাহিড়ী হাটের মানুষর জীবনে। জমিদার ভবানী বাবুর বাড়িটি এখনো তার সৌন্দর্যে লাহিড়ীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা আমার ছোট গ্রাম। শিক্ষা–দীক্ষারও প্রসার ঘটে সেই ব্রিটিশ আমলেই। ১৮৬৬ সালে লাহিড়ীতে গুরু ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ করে ছিল ব্রিটিশ সরকার। তৎকালীন বৃহত্তর দিনাজপুরে একমাত্র গুরু ট্রেনিং স্কুল। পরবর্তীতে সেটি ঠাকুরগাঁও শহরে স্থানান্তর করা হয়. যা বর্তমানে পিটিআই নামে পরিচিত। এছাড়া আমার গ্রামে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত লাহিড়ী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ব্রিটিশ আমল থেকে শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখে চলছে।
হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সকল ধর্মের মানুষ এখানে মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে। সাম্প্রদায়িকতা প্রীতি ছাড়াও এখানে নারীরা পুরুষের সমান তালে কাজ করে। কখনো হাঁটু পানিতে নেমে পাট পরিস্কার করা, কখনো পুরুষের পাশাপাশি মাঠে কাজ করা, ধান কাটা, ধান মারাই ও ফসল উৎপাদন করার মতো কাজ তারা অনায়াসে কাজ করেন। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে স্কুল,কলেজে, কর্মক্ষেত্রে যেতে বেশ পারদর্শী।

ধান, গম,আম,কাঁঠাল,সবজি, পাট ও চা পাতা, সবুজ শ্যামলা সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ আমার গ্রাম। আঞ্চলিক ভাষার ভিন্নতা, তীব্র শীতে অতিথি পাখির আগমণের কলতান, কখনো কখনো শীতকালে বাড়ির উঠোন থেকে দেখতে পাওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা অপূর্ব সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় ডুবে থাকে ছোট্ট এই গ্রামটি।

কখনো হাত বাড়াতেই পেয়েছি আধুনিকতার ছোঁয়া কখনো পেয়েছি গ্রামীণ জীবনের নির্মল ভূমি,সচ্ছ জল,চঞ্চল বায়ু। লাহিড়ী হাটকে ঘিরে আমার কাটানো শৈশব কৈশোর এখানেই লুকানো আমার অস্তিত্ব। নিজেকে বার বার খুঁজে পেয়েছি এই গ্রামের ভূমিতে, জলে, ঝরে পড়া শিশির কণায় আবার বার বার নিজেকে হারিয়েছি শৈশব-কৈশরের স্মৃতির আঙিনায়।
নুসরাত মিশু: কর্মশালা ও অনুষ্ঠান নির্বাহী, বইচারিতা
‘আমার প্রিয় গ্রাম’ নিয়ে লিখুন
আপনি আপনার প্রিয় গ্রামকে নিয়ে আমাদের কাছে লিখুন। সঙ্গে পাঠাবেন গ্রামের একাধিক ছবি ও আপনার পরিচতি। সর্বনিম্ম ৩০০ শব্দে লিখে ফেলুন আপনার গ্রামের যা যা আছে, বেড়ে ওঠা, গ্রামকে নিয়ে স্মৃতি, স্বপ্ন, গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ইতিহাস-ঐতিহ্য স্থাপনাসহ নানা বিষয়— এই সব নিয়ে চটজলদি লিখে আমাদের ইমেইল করুন। ইমেইল : boicharita@gmail.com