কুমুদ স্যারের সঙ্গে ২২ বছর পর দেখা

কুমুদ রঞ্জন বিশ্বাস। গাজী মেমোরিয়াল হাইস্কুল। রূপসা, খুলনা। তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক।
প্রায়শ কুমুদ স্যারের কথা আমার মনে পড়ে। স্যার এখন কোথায় আছেন? কেমন আছেন? কিছুই জানি না।
একদিন স্কুলে গেলাম স্যারের খোঁজ জানতে। স্কুল থেকে স্যারের মোবাইল নম্বর আর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে ফিরে এলাম খুশিমনে। পরদিন অর্থাৎ ৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ ছুট লাগালাম স্যারের বাড়ির ঠিকানায়!
রুপরামপুর গ্রামের স্যারের বাড়িতে। স্যারকে বললাম, স্যার, আমি আপনার ছাত্র।
স্যার মুখে হাসি ধরে বললেন, মনে আছে রে, শিক্ষক মানুষ ভুললে চলবে কেন, মাসুম বিল্লাহ, তালিমপুর…
সব ছাত্রকে তো মনে রাখা সম্ভব না, তুমি আমার স্নেহের
ছাত্র ছিলে, সেকারণেই ভোলোনি, স্যারকে দেখতে চলে আসছো…।
আমি ভাবছি, ২২ বছর পর শিক্ষক আর ছাত্রের দেখা। স্যার ঠিক আগের মতোই আছেন যেন!
স্যার বাসায় একা। একমাত্র ছেলে চন্দন বিদেশে লেখাপড়া করছে। স্ত্রী সকাল সকাল বেড়িয়েছে আত্মীয়দের বাড়ি।
স্যার বাসায় একা। একমাত্র ছেলে চন্দন বিদেশে লেখাপড়া করছে। স্ত্রী সকাল সকাল বেড়িয়েছে আত্মীয়দের বাড়ি।
এই ফাঁকে স্যার বললেন, কিছু না খেয়ে তো তুমি যেতে পারবে না, তোমার কাকি ভোরে উঠে ভাত, ডাল, আলুভর্তা করে রেখে গেছে…
একটু থেমে আবার বললেন, আল্লাহ কখন কার রিজিক কোথায় রাখেন তা কে বলতে পারে।
স্যার ৩৯ বছর গাজী মেমোরিয়াল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে ২০০৮ সালে অবসর নিয়ে এখন শহর থেকে দূরে এক সবুজ শান্ত গ্রামে বসবাস করছেন।
সময় কাটে সবজি ক্ষেতে, মাছের ঘেরে; আর বিকেল থেকে রাত অবধি বাসায় বসে ছেলে-মেয়েদের পড়িয়ে।
স্যারের বয়স, সুস্থতা ও সৌন্দর্য, জ্ঞান, পড়াশুনার কাছে
আমি আমরা অনেকেই ম্লান।
পুনশ্চঃ ইসলাম ধর্মের ওপর তার যাবতীয় পড়াশুনা, বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা, ভক্তি আমাকে মুগ্ধ করে, তেমনি আমাকেও লজ্জিতও করে; কারণ আমরা নামে চলি, কর্মে নয়।
এক বেলা স্যারের বাসায় কাটিয়ে বিকেলবেলা ফিরে এলাম।
২.
গত পরশু মানে ১৩ই জুন ২০১৯ তারিখ কুমুদ স্যার (কুমুদ রঞ্জন বিশ্বাস) আমাকে ফোন দিলেন, মাসুম, কেমন আছো? বাবা-মা কেমন আছে? সেই-যে গেলে আর এলে না…
লজ্জা পেলাম। আমি বলি, স্যার, মনে মনে ভেবেছি যাবো, কিন্তু হয়ে ওঠেনি…আসবো স্যার…
২০১৭ সালের ৪ এপিল স্যারের সঙ্গে ২২ বছর পর দেখা, এরপর আবার বিরতি…, মাঝে কয়েকবার যাওয়ার কথা ভেবেছি, কিন্তু অলসতার কারণে হয়ে ওঠেনি…
মন কেমন করে ওঠল। সুবাইতার আম্মুরে বললাম, স্যারের কথা শুনে আমার মায়া লাগছে, যেতেই হবে…
২০১৭ সালের ৪ এপিল স্যারের সঙ্গে ২২ বছর পর দেখা, এরপর আবার বিরতি…, মাঝে কয়েকবার যাওয়ার কথা ভেবেছি, কিন্তু অলসতার কারণে হয়ে ওঠেনি…
মন কেমন করে ওঠল। সুবাইতার আম্মুরে বললাম, স্যারের কথা শুনে আমার মায়া লাগছে, যেতেই হবে…
সুবাইতার আম্মু বলল, অবশ্যই যাবা…এখন যাও
বলি, না, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে…
মন ছুটল। গতকাল ভোর ৬টায় বাসা থেকে বের হলাম।
রূপসা টু দৌলতপুর, সেখান থেকে থুকড়া, রূপরামপুর। বেশ লম্বা পথ।
সকাল ৮টা নাগাদ স্যারের বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
স্যার বাড়ির কাজে মগ্ন।
স্যার আমাকে দেখে বললেন, শুক্রবার আমরা মাছ-মাংস খাইনে, তুমি আজই এলে, এরপর আর শুক্রবার আসবা না…
গরমভাত, ডিম, ডাল দিয়ে সকালে খাবারটা খেলাম…
স্যারের স্ত্রী বললেন, সে-বার আমি বাড়ি ছিলাম না, আজ আবার শুক্রবার…তবু যা-পারি তা দিয়ে দুপুরে খাবা…
আমি বললাম, ডাল-ডিম হলো স্বর্গের খাবার…এতেই আমি তৃপ্তি পাই, অন্য খাবারে নয়…
স্যার গোসল সেরে পূজোর ঘরে গেলেন। আমি বসে আছি।
কিছুক্ষণ বাদে স্যার পুজো সেরে এলেন। এসেই বললেন, তোমার নতুন বই আর বের করছো নাকি?
আমি মাথা নুইয়ে বলি, না, স্যার…
স্যার বললেন, বই বিক্রির টাকাগুলো একজায়গায় রাখবা, তারপর সে-টাকা দিয়ে আরেকটা নতুন বই বের করবা…
বলি, আচ্ছা স্যার…
তারপর স্যার মনে করার ভঙ্গিতে বললেন, গতকাল তোমার বইটা (প্রেম অথবা ঘুমের গল্প) আবার পড়তেছিলাম… আমার ছাত্র-ছাত্রীরা তোমার বইটা দেখে আর বলে, ‘স্যার, আপনার ছাত্রটা কিন্তু আপনারে অনেক ভালোবাসে…’
কথাটা শেষ করে স্যার অন্যরুমে গেলেন, ফিরেও এলেন দ্রুত…
স্যারের হাতে মলাটবন্দি একটা বই। বইটা আমার হাতে দিলেন…
মলাট উল্টে দেখতেই আমি অবাক হই, এ যে আমার বইটা!
বললাম, স্যার, এটাতে ‘মলাট’ দিয়েছেন!
স্যার বললেন, দিলাম!
যাঁরা আমাদের স্বপ্নকে, আমাদের জীবনের পথচলারকে হাত ধরে শিখেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন সর্ব সময়ে, তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ‘বইচারিতার আয়োজন ‘ স্মৃতিতে আমার প্রিয় শিক্ষাগুরু’। আপনি আপনার প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে আমাদের কাছে লিখে পাঠিয়ে দিন। সঙ্গে পাঠাবেন শিক্ষকের ছবি, নিজের ছবি, যদি শিক্ষকের সঙ্গে কোনো ছবি থেকে থাকে। থাকবে সেরা ১০জন লেখকের জন্য থাকবে আকর্ষণীয় বই ও সনদ। লেখা পাঠাবেন: boicharita@gmail.com